ছাত্রজীবনে সিনেমা দেখেছিলাম এক্সিডেন্টে নায়িকা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এরপর সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আবার সেই স্মৃতি পুনরুদ্ধার হয়েছে। আমার সিঁড়ি থেকে পড়ে আঘাত পাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি তবে মনের ভিতর বড় একটা আঘাত লেগেছিল। তাই মনে পড়ে গেল মাদারীপুর থেকে টুঙ্গিপাড়ায় বদলির জন্য স্ত্রীসহ মালপত্র যশোরে স্থানান্তরের কথা। ঘটনাটা এরকম
পাটুরিয়া ঘাট থেকে জিপে চেপে ঢাকার দিকে আসছি আমার সামনে একটি ছোট্ট হাফটনি পিকআপ সেই পিকআপে রান্নাঘরের শোকেস, প্লাস্টিকের চেয়ার থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র বোঝাই দেওয়া। সর্বপিছনে বসে আছেন একজন মহিলা সাথে দুটি বাচ্চা একটি হয়তো বছর তিনেক আরেকটি বছর খানেক। বছর তিনেকের বাচ্চাটি বমি করতে শুরু করেছে। বমি করার মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে পিকআপ এর পিছনের ডালার উপরে থূতনিটা রেখেছে। সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে সর্বক্ষণ তাকিয়ে আছি উঁচু-নিচু রাস্তার ঝাঁকুনিতে কখন নাকি আঘাত পেয়ে রক্তারক্তি হয়। মহিলা সর্বক্ষণ ড্রাইভার এর কাছে নালিশ করছেন বলা হয়েছে ভিতরে নেয়া হবে কিন্তু বাইরে বসানো হয়েছে।
আমিনবাজারের ব্রিজে ক’মাস আগে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এক লেনে পর্যায়ক্রমে গাড়ি যেতে দেওয়া হয় তাই যানজট লেগেই থাকে। পদ্মা-যমুনার মত ব্রিজ হলেও সেগুলো বিদেশি প্রকৌশলীদের করা। আমাদের দেশের ব্রিজ গুলো নদীর মাঝখানে পিলার আর উপরিভাগ ঢেউ খেলানো। আমাদের দেশের বড় বড় ব্রিজ করার জন্য সরকার কৃতিত্ব নিতে পারে। সরকারি অর্থে এগুলো তৈরি হয়েছে কিন্তু এর কারিগরি শৈলির জন্য আমরা কৃতিত্ব দাবি করতে পারি না কারণ বিদেশি প্রকৌশলীদের ডিজাইনারদের করা। এই দৃশ্য আমি ক’মাস যাবত দেখছি এভাবেই চলছে পরিদর্শন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা। একপর্যায়ে যানজটে আটকে গেলে আমার ড্রাইভারকে দিয়ে ওদেরকে বললাম আমিও ঢাকায় যাব আমার গাড়িতে তাকে সুন্দরভাবে বাড়িতে পৌঁছে দেবো কিন্তু সে রাজি হলো না।
তখন মনে পড়ে গেল মাদারীপুর থেকে সংসারের সব মালামাল নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে যাত্রার কথা। সংসারে তখন তেমন কিছুই ছিলোনা ডাক বাংলাতেই বাবুচি রান্না করে দিতো সেখানেই খাওয়া-দাওয়া হতো। নিজেদের কিছু কাপড়চোপড় আর ঘটিবাটিসহ মাদারীপুর থেকে বাসে রওনা হলাম সাথে আমার স্ত্রী। তখন যশোর পর্যন্ত সরাসরি মাদারীপুর থেকে বাস সার্ভিস ছিলনা। ফরিদপুর পর্যন্ত বাসে আসতে হতো। তারপর বাস পরিবর্তন করে ফরিদপুর থেকে যশোর যেতে হতো। আজকের দিনের মত এয়ারকন্ডিশন বাস ছিলনা। এখনকার মতো ভাড়া মাইক্রোবাস ও পাওয়া যেত না। আর পাওয়া গেলেও সে সামর্থ্য তখনকার দিনে এসিস্ট্যান্ট কমিশনারের ছিল না।
ফরিদপুর পর্যন্ত ভালোভাবেই গেছি কিন্তু রাজবাড়ী মোড়ে এসে জানতে পারলাম যশোর পর্যন্ত বাসে স্ট্রাইক। আমাদের অবস্থা দেখে পাশের দোকানদাররা পরিচয় জিজ্ঞাসা করল। পরিচয় পেতেই তারা যশোরগামী ট্রাক ড্রাইভারকে অনুরোধ করে একটি ট্রাকে মালপত্রসহ আমাদেরকে উঠিয়ে দিলো। আমি আর আমার স্ত্রী ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে যশোর চলে আসলাম। এখনকার দিনে সেটি ভাবা যায় না। সহকারি কমিশনার এটি অপমানকর মনে করে। এভাবে হয়তো ঢাকার বস্তিবাসীরাও এখন আসাযাওয়া করে না। এখনকার দিনের মতো মোবাইল ফোন ছিল না তাই ফরিদপুর কালেক্টরেটে যোগাযোগ করে সমাধানের সুযোগ ছিল না।
শেখ হাসিনার সরকারের প্রভাবে এ ধরনের হরতাল হয় না। সামর্থের ভিতরেই ভাড়া মাইক্রোবাসের ছড়াছড়ি। জানাশোনা অনেকের গাড়ি আছে। অফিসের গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। মোবাইল ফোনে বিপদাপদে সহজে যোগাযোগ করে সমাধান করা যায়। বেতন বেড়েছে, আয় বেড়েছে। সম্মানের প্যারাডাইম শিফট হয়েছে।