ভ্রমণে আমার হাতে খড়ি টা তেমন সুখকর হয়নি। তবে জীবনের প্রথম মুক্তির স্বাদ পেয়েছিলাম। শেষ পরিণতি অনেক স্বাধীন দেশের মতোই নব্য কলোনিয়ালিজম এর শিকার। আরো কড়াকড়ি আরো বাধ্যবাধকতা।
বোধকরি সালটা ১৯৬৭ হবে। তখন পাকিস্তানে ১৪ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস হিসেবে সকল ট্রেন ফ্রী ছিল। আমি তখন ক্লাস সিক্স-সেভেনের ছাত্র হব। যশোর রেল স্টেশনে গিয়ে চেপে বসলাম ফ্রী ট্রেনে। গন্তব্য কিংবা ফিরতি ট্রেনের সময়সূচী জানা না থাকলেও কোনো উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছিল না।
জীবনের প্রথম পদ্মা নদীর উপর দিয়ে বড় একটা ব্রিজ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পার হয়ে মনে হলো বিরাট একটা কিছু দেখে ফেলেছি। এরপর পাকশী, তারপর ঈশ্বর্দি স্টেশন দেখলাম। পকেটেতে তেমন পয়সা ছিল না। মুড়ি চানাচুর খেয়ে শেষ হয়ে গেল। এর মাঝে পার্বতীপুর পৌঁছে নেমে পড়লাম স্টেশনে। ক্ষুধার রাজ্য গদ্যময় হতে শুরু করল। রেলস্টেশনে সারি সারি বিশাল আকারে বরফের ইলিশের ঝুড়ি। আগস্ট মাসের প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম। ঝুড়ি থেকে কয়েকটি বরফ খন্ড নিয়ে চুষতে শুরু করলাম। তাতে কি আর কাজ হয়। তবে কেউ হয়তো আমার গতিবিধি লক্ষ্য করছিল। খুলনার একদল লোক আমাকে জিজ্ঞাসা করল খোকা বাড়ি কোথায়? কেন এসেছ ? কোথায় যাবে ? আমার কথা শুনে তারা বুঝল বড় একটা ভুল করে ফেলেছি। তারা আমাকে আদরের সাথে সাথে নিল, খাবার-দাবার খাইয়ে আবার যশোরে এনে বাড়িতে পৌঁছে দিলো। তারপর যা হওয়ার সেটা নাই বললাম। সেই থেকে ভ্রমণ শব্দটি আমার————।
আমি পৃথিবীর অনেক দেশে অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছি অত্যন্ত সস্তা এবং সহজে থাকার ব্যবস্থা করেছি। অনেকে শুনে মনে করেন কত মানুষের কত পকেট কেটে বা সরকারি অর্থের তেলেসমাতি করে ভ্রমণ করেছি। ফেসবুকে কেউ কেউ লিখেওছিলেন। মন চায় তাদেরকে আমি শিখিয়ে দেই কিভাবে সস্তায় সহজে ভ্রমণ করতে হয়; কিভাবে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে হয়; কিভাবে ওই দেশের মানুষের বাড়িতে থাকতে হয়। কীভাবে কী শিখতে হয়। কি করে একটি সামান্য উপহার ভিন্ন দেশ কিংবা জাতির মানুষের কাছে অমূল্য করা যায়।