মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা নির্বাহি অফিসার থাকাকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজশাহী হিসেবে পোস্টিং অর্ডার পেলাম। আদেশ পাওয়ার পর প্রায় এক মাস শিবালয় অবস্থান করলাম। রাজশাহীতে যাওয়ার আগে যথারীতি যোগাযোগ করে পদ্মা নদীর পাড়ে সরকারি বাসা ‘প্রান্তিক’ ঠিক করলাম।
ভাড়া করা মাইক্রোবাসে রাজশাহী রওনা হলাম।মালামাল একটি ট্রাকে তুলে দেওয়া হয়েছে। তখন ফেরিঘাট আরিচায়, প্রচন্ড ভিড় হতো। এখনকার দিনে সেটা অনুমান করা সম্ভব নয়। কোন কোন সময়ে গাড়ি পার হতে কয়েকদিন লেগে যেত। ট্রাকের ক্ষেত্রে কোন কোন সময় সপ্তাহখানেক লেগে যেত। শিবালয় উপজেলার নিবার্হী অফিসারের বাসা হতে আরিচা ঘাট তিন চার কিলোমিটার দূরত্ব। আমি নিজেই বহু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পার করিয়ে দিয়েছি। আজ আমি নিজেই পার হয়ে নগর বাড়িতে যাব। কিন্তু আরিচা ঘাটে যেতেই আবার ৬ ঘন্টা লেগে গেল।
ফেরিতে নদী পার হয়ে রাজশাহীতে পৌছালাম মনে মনে বেশ প্রশান্তি বোধ করছিলাম, এখানকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ বছর কাটিয়েছি, অনেক পরিচিত মানুষ আছে, তার উপর নতুন দায়িত্ব এবং বিভাগীয় জেলায়। এইয়া চৌধুরী বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন। টুঙ্গিপাড়ার উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন তিনি গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ছিলেন। তিনি আমাদের সকলকে প্রশিক্ষকের মত শেখাতেন। একজন অনুকরণীয় কর্মকর্তা। কিছুদিন পর জেলা প্রশাসক হিসেবে ফরিদ আহমেদ লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক থেকে থেকে আসলেন। তিনি লালমনিরহাটে শতভাগ সাক্ষরতার অভিযান সফল করে এসেছেন। এখানে এসে বিভাগীয় কমিশনারের পরামর্শ ‘সন্দীপন’ নামে সাক্ষরতা অভিযান চালু করলেন। আমি সেই প্রোগ্রামের সদস্য সচিব। সারাদিন অফিসের শেষে গ্রামেগঞ্জে সাক্ষরতার অভিযানের জন্য ছুটে বেড়িয়েছি। ফিরে এসে কর্মকাণ্ড রিভিউ করে রিভাইস কর্মতৎপরতা শুরু করেছি।
এখানে কাজ করার সময় পুলিশের সাথে প্রচুর হল্লা ডিউটি করতে হতো। তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাসেম সাহেব ডিউটি বাটতেন তিনি বেশিরভাগ সময় আমাকে এই ডিউটি দিতেন। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে তখন তুমুল আন্দোলন এমনকি আন্দোলনে পুলিশ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে। এই সময়ে মাগুরার উপনির্বাচন হয়। এই সময়ে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ হন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
রাজশাহীর মানুষের একটা অংশ বি এন পির কড়া সমর্থক ছিল। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর পরদিন সকালে আমরা বেশ কয়েকজন হাঁটতে-হাঁটতে অফিসের দিকে যাচ্ছি। পিছন থেকে কয়েকজন আসছে এবং বলছে কাল সারারাত তাদের ঘুম হয়নি কারণ বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে হেরে গেছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব হিসেবে ‘সত্ত্বদানে সেবা’ প্রোগ্রাম চালু করেছিলাম। এটি রেকর্ড আপডেট করার একটি প্রোগ্রাম।
এখানে ভালো খাবার খেয়েছি। এখানে পুঠিয়ার মাজারে মানুষ মানতকরা প্রচুর মোরগ-মুরগী দেয়। সেগুলো বিক্রি করে মাজার ফান্ডে জমা দেওয়ার বিধান আছে। মোতাওয়াল্লীকে বলে দাম অনুযায়ী মাঝে মাঝে মুরগি কিনে আনতাম। মাঝারি সাইজের মুরগিগুলো আমরা পছন্দ করে আনতাম।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিদর্শনের কাজে প্রায়ই বাঘা উপজেলায় যেতে হতো। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেভিনিউ হিসেবে বাঘা মসজিদের ট্রাস্টের সভাপতি ছিলাম। সেখানে গেলে কৃষকের পেঁপের ক্ষেতে গিয়ে ঝুড়ি ভরে পেঁপে তুলে আনতাম মাত্র ৪ টাকা কেজি এর অনেকগুলো আবার রাখলে পেকে যেতো। শাকসবজির প্রাচুর্য ও সস্তা ছিল। তখনকার দিনে সাধারণত কীটনাশক ব্যবহার করা হতো না।
প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো তারপরও রাজশাহীর জীবনটা খুবই ভালো ছিল।