যদি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকো,
যদি আখের গোছাতে চাও তা হলেও ক্ষমতা আঁকড়ে রাখো।
তথ্যপ্রযুক্তি কার্বন নিঃসরণের দিক থেকে অনেক পরিবেশ বান্ধব। আকাঙ্ক্ষা ছিল এমন একটা হাইটেক পার্ক হবে যেটা শুধু পরিবেশ বান্ধবই না পর্যটন বান্ধব, নলখাগড়া বান্ধব, প্রবাহমান পানি বান্ধব। সারা বাংলাদেশে ঘোরাঘুরি করেছি কিছুটা ধারণা ছিল বেরিয়ে পড়লাম সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে। ইতোপূর্বে লন্ডন সফরের সময় তরুণ লন্ডনী কয়েকজনের সাথে কথা বলেছিলাম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে বললাম আর কাউকে বলবেন না আমরা নিরবে হাইটেক পার্কের জায়গা দেখব। ধারণাটা এরকম ছিল- যদি অনেককে জানাজানি করি তবে তারা তার এলাকায় করার জন্য অন্য এলাকার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। তারও আগে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ থাকাকালীন তোফায়েল আহমেদ সাহেবের শ্যালক মামুন ভাইয়ের সাথে ফ্রান্সের বিনিয়োগ লাফার্জ সিমেন্ট ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করি। ভারত থেকে চুনাপাথর আনার কনভেয়ার বেল্টে করে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত গিয়ে দেখেছি। পাশের পরিবেশ দেখার জন্য ছাতক সিমেন্ট কারখানা এবং মাটির নিচে থেকে চিনা মাটির পাত্র তৈরির জন্য ক্লে (পলিমাটি) খনিও দেখেছি। সিলেট থেকে কোম্পানীগঞ্জ বরাবর উত্তর দিকে যেতে থাকলাম। দু’ধারে একসময় দুর্গম নলখাগড়ার বন ছিল। ছাতকের মন্ড কারখানার কাঁচামাল হিসেবে নলখাগড়ার পুনর্জন্ম হারের চেয়ে বেশি কেটে নেওয়া ঘন বন আর জন্মায়নি। তবে এখনো নলখাগড়ার গাছ আছে। বর্ষায় এখানে অন্তত ১০ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। রাস্তার দু’পাশে যতদূর চোখ যায় নলখাগড়ার বন। এরপর শীতের সময় গিয়েছি তখন বিস্তৃত প্রান্তরে পানির কোন নিশানা নেই। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম এখানেই উপযুক্ত স্থান। সামনে তাকালে উত্তরের মেঘালয়ের পাহাড় চোখে পড়ে।
তথ্যপ্রযুক্তির কাজ অত্যন্ত একাগ্রতা দরকার হয় মাথা মন-মনন একত্র করতে হয়। শারীরিক পরিশ্রম না থাকলেও সহজেই ক্লান্ত হতে হয়। বিনোদন আইটি প্রযুক্তিকর্মীদের অনুষঙ্গ। এই আইটি পার্কে যারা কাজ করবে তারা ফাকে অবসরে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াবে। এখানে যারা কাজ করবে তারা সোজা উত্তর দিকে ভারতের মেঘালয় ঘুরে আসবে। দেখবে অবিরাম বৃষ্টির চেরাপুঞ্জি, পাহাড়ি ফুল, পাহাড়ি গাছের শিকড়ের প্রকৃতির সেতু। রসনা তৃপ্তি করবে পাহাড়ি নানা জাতের ডাল, মুরগ, ভুট্টা, আঠালো চাল আর চোকো দিয়ে।
একদিন এখান থেকেই সোজা উত্তরে বর্ডার চেকপোস্ট হবে। মেঘালয় ভারতের অনুন্নত স্টেট এর একটি। এখানকার কর্মীরা এই হাইটেক পার্কে এসে কাজ করবে এই সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে আসা-যাওয়া করবে হাইটেক পার্ক আর যার যার বাড়িতে। মনে মনে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে সবশেষে আরেকদিন গেলাম কোম্পানিগঞ্জ ফোন দিলাম এমপি মহোদয়কে সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে না জানিয়ে আসার জন্য গলার স্বরটা একটু অন্যরকম ছিল। কিন্তু তিনি নিরেট ভদ্রলোক সে কথা আগেই জেনে এভাবেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। উনি রাজি হয়ে গেলেন। বাধা দেওয়ার আর কেউ থাকলো না। মাঠের মধ্যের জমির আশপাশে কোথাও কোন বাড়িঘর নাই। সরকারি খাস খতিয়ানের জমি, কোন অবৈধ দখলদার নেই। একটাই বাধা- মনের বাধা। পরিবেশ নষ্ট করছি কিনা ?
কোন আকাঙ্খার বাস্তবায়নে বিকৃতি তখনই হয় যখন আকাঙ্ক্ষার ব্যাখ্যা উত্তরসূরিদের কাছে না জানানো হয়। দ্বিতীয়তঃ যারা ফায়দা আদায় করতে চায় তারা তাদের মত করে বাস্তবায়ন করতে চায়। চিন্তা দুটো মাথায় রেখে সহকর্মীদের বারবার বলেছি স্বপ্নটা কি! রাস্তার পাশ থেকে একটি নান্দনিক ব্রিজ হবে যা দিয়ে হাইটেক পার্ক সংযুক্ত থাকবে। বাউন্ডারি ওয়াল থাকবেনা। সীমানা দিয়ে হিজল গাছ লাগানো থাকবে। বর্ষা-শীতে চোখের সামনে ভার্চুয়াল সীমানা মনে হবে। মাটি ভরাট করা হবে না। পানি বিনা বাধায় প্রবাহিত হতে পারে। বহুতল ভবনগুলো একে অপরের সাথে বৃষ্টির সংযুক্ত থাকবে। নিচতলা খোলা ফাঁকা কংক্রিট না, এখানেও থাকবে নলখাগড়ার রাজত্ব। একটি সিঁড়ি এই নলখাগড়ার রাজ্যে নেমে আসবে। বহুতল ভবনগুলোয় চার চালা ছাদ থাকবে, সবুজ বা লাল রঙের হতে পারে। চিন্তা ভাবনা করে আলোকসজ্জার ডিজাইন করা হবে, বর্ষায় পানির উপর আলো পড়ে মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এক নজর তাকিয়েই কম্পিউটার স্ক্রিনের ক্লান্তি নিমিষেই উবে যাবে। আর শীতে যখন পানির কোন নিশানা থাকবে না তখন সিঁড়ি বেয়ে নলখাগড়া বনে খালি পায়ে বিচরণ করতে পারবে। প্রকৃতিকে আবিষ্কার করবে, প্রকৃতিপ্রেমী হবে।
ম্যাকাডাম রাস্তা দিয়ে এখন অতি বোঝাই পাথরের ট্রাক চলে। পাথরের কোন অভাব নেই। মসৃণ গাড়ি চালানোর রাস্তা হবে। রেখে আসা, আর অনাগত ভবিষ্যতের কনিষ্ঠ সহকর্মীরা বাস্তবায়ন করবেন এই ক্ষুদ্র আশাটি করেছিলাম। বুঝেছিলাম সোজা নয়, ভিতর-বাইরে অনেকেই মাটি ভরাট করাতে চায়। কাজে নাকি মস্ত লাভ। ক্ষতি ভাবার সময় তাদের কোথায়?
মিউজিয়াম কমিটির সভায় দেখা হলো স্থাপতি ইকবাল হাবিব সাহেবের সাথে, তার ফার্ম স্থপতি সিলেটের হাই-টেক পার্কের ডিজাইন করছে। তিনি আমাকে বললেন আমি শুনেছি এই হাইটেক-পার্ক টি আপনার চিন্তার ফসল। কিছু চিন্তা এর সাথে যুক্ত করলে আমরা আরও সুন্দর করে কাজটি করতে পারি। শুনে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। বললাম অবশ্যই কথা বলব।
স্যার,
আসসালামুআলাইকুম।কেমন আছেন?আশা করছি ভালো আছেন।
আমি বেশ কিছুদিন যাবত দৈনিকশিক্ষার মাধ্যমে আপনার কথাগুলি শুনতে পারি।বেশ অসম্ভব ধরনের যোগ্য ও কৌশলী মানুষ আপনি। আপনার কথাগুলো খুব সাধারণ হলেও মানুষ হিসেবে আপনি অসাধারন ব্যক্তিত্বের অধিকারী।শিক্ষার যে সজ্ঞাটি আপনি দিয়েছেন তা সক্রেটিসকেও হার মানায় (এটা আমার মতামত)।
আমি রতন চন্দ্র নাথ ,এম বি এ(ব্যবস্থাপনা)।আপনার একজন শক্ত ভক্ত।আপনাকে বেশ ভালো লাগে।আপনার কথাগুলো ভালো লাগে।আপনার জীবনধারন প্রক্রিয়া ভালো লাগে।
আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে।
যদি সময় ও সুযোগ হয় -01728366344