“We may not meet in this world but we are sure to be together in the next”- on 24th March 1971 Sheikh Mujib said to him when talk with Yahya Khan failed, Sardar Saukat Hayat a Pakistani Politician recall.
সন্ধ্যায় আমার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ঘিরে রাখা হয়। পরিকল্পনা করে রেখেছিল আমি বাড়ি থেকে বের হলেই আমাকে হত্যা করা হবে এবং আমার মানুষদেরকেই আমার হত্যার জন্য দোষারোপ করা হবে। বলবে কিছু চরমপন্থি তাকে হত্যা করেছে। এরপর শুরু হবে আমার বাঙালি হত্যা। ইয়াহিয়া খান বলবে এই ছাড়া আমার আর করার কিছু ছিল না। তাই আমার পক্ষে আমার মানুষকে রক্ষা করা সবচেয়ে বড় কথা; মানুষের জন্য আমার মৃত্যু হলেও সেটাই উত্তম ছিল। ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে এ কথাগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিজেই ডেভিড ফ্রস্ট এর সাথে সাক্ষাৎকারে স্মৃতিচারণ করেছিলেন।
সন্ধ্যায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে একজন রিকশারোহী এসে একটি চিরকুট দিয়েছিলেন “৩২ নম্বরের এই বাড়িতে আজ রাতেই হামলা করা হবে।” অন্যান্য উৎস থেকে তাঁর কাছে একই খবর ছিল। আত্মীয়-স্বজন শুভাকাঙ্ক্ষীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ক্রাকডাউন এর আগেই পালিয়ে যেতে বলেছিল। একের পর এক স্রোতের মতো টেলিফোন আসছিল। বঙ্গবন্ধু বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, আমি এখান পালিয়ে গেলে তো তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে। তিনি দুই পুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রাস্তার ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ২৪ বছরের আন্তসত্তা জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা, জামাই ড ওয়াজেদ মিয়া ও ধানমন্ডি গার্লস স্কুলের পড়ুয়া ১৪ বছরের শেখ রেহানাকে জিকাতলায় একটি বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বড় ছেলে ১৯ বছরের শেখ কামাল আগেই বাড়ির পিছন দিকের দেয়াল টপকে জাপানি কনস্যুলেটের ভাড়া বাড়ি দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। ৬০ বছরের বৃদ্ধ রান্নাঘরের সহযোগী আম্বিয়াকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে না চাইলে তাকে বুঝিয়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে বাসার কাজের ছেলেটিকেও নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাত এগারোটার পর চারিদিক থেকে টেলিফোনে হত্যা ও গোলাগুলির খবর আসছিল। পরবর্তীকালে ডেভিড ফ্রস্টের সাক্ষাৎকারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান বলেছিলেন “যদি আমি পালিয়ে যাই সমস্ত ঢাকা আগুন জ্বালিয়ে দেবে প্রতিটি বাড়িতে আমাকে খুজবে। অসংখ্য মানুষকে প্রাণ দিতে হবে। তবে তিনি আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাওয়ার সম্মতি দিয়েছিলেন। কি হতে যাচ্ছে সে বিষয়টি বিষয়টি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। করাচি হতে চট্টগ্রাম বন্দরে সেনা ও অস্ত্র নামছে। ক্রাকডাউন এর জন্য প্রস্তুতি স্বরূপ চারপাশ থেকে ঢাকায় করা হচ্ছে এসবই বঙ্গবন্ধুর জানা ছিলো।
ওই দিন রাত ১১ টায় অন্ততপক্ষে ৩০ জন মিডিয়া-কর্মী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থান করছিলেন তাদেরকে বলা হলো তারা যেন বাইরে না যায়, বাইরে গেলে তাদেরকে গুলি খেতে হবে। এগারোটার পরপরই চারিদিক থেকে শব্দ এবং মানুষের আর্তনাদ ভেসে আসতে থাকলো। রাজার বাগ পুলিশ লাইন, বিশ্ববিদ্যালয়, ইপিআর হেডকোয়াটার চারিদিকে আক্রমণ করা হলো। তখনো টেলিফোন লাইন সচল তাই শহর ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল সেই খবর। বঙ্গবন্ধু শব্দই শুধু পাচ্ছিলেন না প্রতিমুহূর্তে তাকে টেলিফোনে সকল খবর জানানো হচ্ছিল।

এরপর বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় পাঠাগার কক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। পাকিস্তান রাইফেলস, রাইফেলস এবং পুলিশ ও আনসার বাহিনী কে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানালেন। আর পূর্বে ৭ই মার্চের ভাষণে জনসাধারণের করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।
রাতে শহরের চারিদিকে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। ধানমন্ডির বাড়ির চারপাশে এর ব্যতিক্রম না। বঙ্গবন্ধুর দুইজন দেহরক্ষী কে রীতিমতো ধমক দিয়ে এই বাড়ি থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। তারা বহু বছর যাবত অত্যন্ত বিশ্বস্ততা ও দক্ষতার সাথে বঙ্গবন্ধুর দেহরক্ষীর কাজ করছে । নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্যের পর সরকার থেকে বলা হয়েছিল তার বাড়ি পাহারা দেওয়া হবে, তাকে বডি-গার্ড দেওয়া হবে । বঙ্গবন্ধু জানিয়ে দিয়েছিলেন, সরকারি পাহারা কোন প্রয়োজন হবে না তার দলের কর্মীরা পালাক্রমে পাহারার ব্যবস্থা করবে।

রাত্রি প্রায় দেড়টার দিকে মেজর বিল্লাল একটি ট্যাংক, একটি সাঁজোয়া যান এবং ট্রাকে করে সৈন্য এনে চারিদিক থেকে গুলি করতে করতে ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করা শুরু করলো। তখন বঙ্গবন্ধু বিছানায়, গুলির শব্দ পেয়ে স্ত্রীকে জাগিয়ে তুললেন এবং পুত্রদ্বয়কে নিয়ে বাথরুমে আশ্রয় নিতে বললেন। এরপর গোলাগুলির শব্দের মধ্যে শয়ন কক্ষের সামনের ডাইনিং স্পেসে এসে বিরক্তি সহকারে উচ্চস্বরে বললেন আমি বাড়িতে প্রস্তুত আছি গোলাগুলি কোনো প্রয়োজন নেই, আমি বেরিয়ে আসছি। ততক্ষণে সেনাদল দোতলায় পৌছে গেছে। ইতিমধ্যেই তার স্ত্রী পূর্বাভিজ্ঞতা অনুযায়ী ব্যাগে কাপড় চোপড় গুছিয়ে রেখেছে। ধূমপানের প্রিয় পাইপটি নিতে হবে তাই আবার শয়ন কক্ষে ঢুকলেন এবং স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিলেন। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে উঠলেন টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারে। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো নির্মাণাধীন সংসদ ভবনের কক্ষে; এরপর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হবে কিন্তু কিছুতেই তারা নিশ্চিত হতে পারছে না মাঝপথে আকাশে ভারতীয়রা বাধা দিবে কিনা তাই দু’বার বাতিলের পর অতি সন্তর্পণে তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হল। রাখা হল নির্জন কক্ষে লায়ালপুর জেলে যার নাম এখন ফয়সালাবাদ, সেখান থেকেই ফয়সালা হয়েছিল বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের। ডিসেম্বরে মিয়ানওয়ালী কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার সেলের পাশেই বসেছিল গোপন সামরিক আদালত। ব্রিগেডিয়ার চেয়ারম্যান, একজন জেলা জজ, দুছাইরমান,দিয়ে গঠিত সামরিক আদালতে বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। মিয়ানওয়ালী কারাগারে আটক ভারতীয় বন্দীদের দিয়ে কবর খোঁড়া হয়েছিল একাধিকবার, কিন্তু হাই কমান্ডের নির্দেশ আসেনি তাই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি। শোনা যায় জুলফিকার আলী ভুট্টো মৃত্যুদণ্ডের সম্মতি দেননি।
বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পরপর বঙ্গবন্ধু স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে পশ্চিম পাশের প্রতিবেশী ডাক্তারের বাড়িতে দেয়াল টপকে ঢুকলেন। তারপর বিভিন্ন বাড়িতে আত্মগোপন করে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনারা তাদেরকে ধানমন্ডি ১৮ নম্বর রাস্তা একটি বাড়িতে নয় মাস আটকে রাখে। বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হওয়ার একদিন পর ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্ত দেশের মুক্ত আকাশে মুক্তি পায়।
ফাযিলাতুন্নেসা মুজিব যে বাড়িটি নিজ তত্ত্বাবধানে সযত্নে নির্মাণ করেছিলেন, নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী গাছপালা লাগিয়ে সাজিয়েছিলেন। সেই বাড়িতে তাদের প্রস্থানের ঘণ্টা খানেক পর আরেকদল সেনা সদস্য এসে সমগ্র ভবনটি তছনছ করে। দু’সপ্তাহ পর অ্যান্থনি মাসকারেনহাস এসে দেখেন একটি ধূসর বিড়াল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, কিছু মুরগি মাটি থেকে খুঁটে খাচ্ছে, কবুতার গুলো এদিকে-সেদিকে খাদ্যের খোঁজে উড়ে বেড়াচ্ছে। প্রতিটি জানালা ভাঙ্গা, এমন কোন দেয়াল নেই যেখানে গুলির চিহ্ন নেই। কয়েক মাস পর কেয়হান ইন্টারন্যাশনালের আমির তাহেরি দেখেন লাইব্রেরী কক্ষে বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে আসা কিছু চিঠি এবং বিয়ের দাওয়াত ব্যস্ততার জন্য খুলতে পারেননি- মুখ আটকানো অবস্থায় মেঝেতে ছড়িয়ে আছে। ডেস্কের উপর একটি বইয়ে তার একসময়ের ইসলামিয়া কলেজের ইংরেজি শিক্ষক ইতরাত হ্যেসেন জুবেরী Jennings এর Constitutional Problems of Pakistan বইয়ের ভেতরের পাতায় politics leads to power, knowledge is power, too লিখে শেখ মুজিব কে উপহার দিয়েছেন।
২৬ মার্চ ২০২২ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ঢাকার প্রকাশনা।