খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০ সালের গ্রিসের করিন্থের আয়না। একজন মহিলা ডান হাতে একটি পাখি ধরে দুটি Pegasos পেগাসাস এর উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় ব্রোঞ্জ এর চাকতিটি একসময় চকচকে ছিল যাতে আয়নার মতো ছবি প্রতিফলিত হতো। শুধু ধনীদের এটি ব্যবহার করার ক্ষমতা ছিল। এই আয়নাকে Cryatid mirror বলা হয়। তখনকার দিনে বর্তমান গ্রীস অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর রাষ্ট্রের বিভক্ত ছিল। তবে তাদের সংস্কৃতি মোটামুটি একই ছিল। এই এলাকায় নারীদের কোন সম্পত্তির অধিকার ছিল না কিন্তু তাদের সাজগোজের জন্য বিয়ের সময় বা তারপরে দেওয়া ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক হতে পারতো। তাই আয়না সহ অন্যান্য সরঞ্জাম তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হতো।
আমাদের দেশে এক সময় কাঁসার থালায় পানি রেখে তাতে মুখচ্ছবি প্রতিফলিত করে আয়নার কাজ চালানো হতো। সাজ সজ্জার ক্ষেত্রেও অনেক প্রাকৃতি হতে প্রাপ্ত বস্তু ব্যবহার করা হতো। যেমন পুঁইশাকের পাকা বীজ ঠোঁটে ঘষে লিপস্টিক এর কাজ এবং পায়ে ঘষে আলতার কাজ করা হতো। বেলের আঁঠা দিয়ে চুল ডিজাইন করা হতো। আমার শাশুড়ি আমেনা খানের কাছে শুনেছি তার বিয়ের সময় (ব্রিটিশ আমলে) বেলের আঠা দিয়ে চুল বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। রাসায়নিক আবিষ্কার হওয়ার পর এই প্রাকৃতিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিহীন বস্তু আর ব্যবহৃত হয় না।
প্রাচীন আমলের কোন কোন বিষয়ে লোককাহিনী হিসেবে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। কিন্তু এমন অনেক বিষয় আছে যা লোকমুখে জানা যায় না। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে আমরা জানা ছাড়াও চাক্ষুষ দেখতে পারি। প্রাচীন আমলে কোথাও কোথাও মানুষকে মৃত্যুর পর পুড়িয়ে ফেলা হতো। তারা শিখেছিল মৃত মানুষ রোগ জীবাণু ছড়ায়। কিন্তু কোন কোন এলাকার মানুষ মানুষকে পুড়িয়ে না ফেলে কবরস্থ করেছে। কবরস্থ করার সময় তার সমস্ত ব্যবহৃত জিনিসপত্র কবরে সুন্দর করে রেখে দিয়েছেন। ধর্ম বিশ্বাসটা এমনই ছিল যে যদি তিনি আবার জীবিত হন তবে যেন এসব বস্তুগুলো ব্যবহার করতে পারেন। প্রাচীন আমলের আয়নাগুলো মানুষের সমাধি থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা উদ্ধার করে মিউজিয়ামের মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছেছেন।
ঝাঁপা বাওড়ের তীর দিয়ে রাজগঞ্জ স্কুলে যাওয়ার পথে একটি শ্মশান প্রতিদিন আমার চোখে পড়তো। ভয়ে ভয়ে পার হতাম সেখানে দেখতাম সকল মৃত মানুষের শব কে পুড়িয়ে ফেলা হয় না। কাউকে কাউকে কবরস্থ করা হয়। তখন শুনতাম সাপে কামড়ালে, বিষ পান করলে তাদেরকে কবরস্থ করা হয়। ওই শ্মশানে দেখতাম হারিকুড়ি কাপড়চোপড় ও অনেক তৈজসপত্র গড়াগড়ি দিতে দেখতাম। বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য এসব সরঞ্জাম দ্রুত পচে উধাও হয়ে যায়। যার শুষ্ক দেশে এইগুলো সহজে পচেনা হাজার হাজার বছর মাটির নিচে রয়ে যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদরা উৎখনন করে আমাদের প্রদর্শনের জন্য মিউজিয়ামে রাখেন। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক এরকম প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন আছে যেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে বঙ্গবন্ধু মিউজিয়ামের সকল ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। এটি নিতন্ত মূর্খতা, ও অর্চিবানের কাজ। কিন্তু আমাদের সম্ভবত একমাত্র দেশ যেখানে তথাকথিত শিক্ষিতরা এটাকে সমর্থন করে উৎসাহিত করে ! যে জাতির সন্তান নিজের পরিচয় কে মুছে ফেলতে চায় সেই জাতিকে কি বলা যায় ?








