রাজগঞ্জ স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। তা-ও বাড়ি থেকে অন্তত তিন মাইল দূরে।আব্বার একটা সাইকেল ছিল। বেশিরভাগ সময় সাইকেলে স্কুলে যেতে দিতেন না। উনি চাইতেন আমি হেটে স্কুলে যাই। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঝাঁপা বাওড় এর পাড় দিয়ে শ্মশানঘাটের মধ্য দিয়ে রাজগঞ্জ স্কুলে পৌঁছাতাম। শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার সময় গা ছমছম করত। সামনে মাথার খুলি, বালিশ, কলস, তৈজসপত্র ইত্যদি ছড়িয়ে থাকতো। কোন কোন দিন পায়ের মানুষের হাড় বেধেছে। নাক বন্ধ করে মানুষের পোড়ার গন্ধ দূর করার ব্যর্থ প্রয়াস নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্কুলে গেছি। বাওড়ের নিচের রাস্তায় খেজুর আর বাবলার কাটা ছড়ানো থাকতো। তানজানিয়ার হাতজাবেদের কথা শুনেছি। সারাদিন শিকারের পর দিনের শেষে তারা পায়ের সব কাটা বের করার জন্য ব্যস্ত থাকে। আমাদের মাঝে মাঝে হাতজাবেদের অনুকরণ করতে হতো।
সকালে মায়ের রাধা গরম ভাত খেয়ে হেঁটে স্কুলে পৌঁছতে পৌঁছতে ক্ষুধা লেগে যেত। ক্লান্ত ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাড়িতে পৌঁছাতাম। ক্লাসে এসে টেবিলের ওপর বেত দেখতাম। মাঝে মধ্যে আঙ্গুলের মাঝে পেন্সিল দিয়ে চাপ দেওয়া হত। পেটের চামড়া মোচড় দিয়ে মধুমোড়া নামের একটি শাস্তির সৃষ্টি করা হয়েছিল। কান ধরা তো খুবই সাধারণ বেঞ্চের ওপর দাঁড়ানো বা বারান্দায় দাঁড়ানো অপমানের হলেও খুব কষ্টকর ছিল না। high school tyrone দেভর করছে। তবে কোনো কোনো শিক্ষক মারখুটে হলেও খুবই ভালো পড়িতেন মুখস্থ হয়ে যেত যেমন chemistry teacher। তাই স্কুল থেকে chemistry প্রতি একটু দুর্বলতা সৃষ্টি হয়ে গেল। এভাবেই কয়েক মাস গেল তারপর পাকিস্তানি সৈন্যরা স্কুলে এসে ঘাঁটি গাড়ল। সাথে সহযোগীরা রাজাকাররা ছিল। পাকিস্তানি সৈন্যরা মাঝে মাঝে আমাদের উদ্দেশ্য করে বক্তৃতি দিতেন। তারা বলতেন তোমরা সবাই পাকিস্তানি। এমন একদিন আমাদের একজন শিক্ষার্থী হক বলে ওঠেলো হিন্দু কাহা হায়? পাকিস্তানি সৈন্য বললো হিন্দুকা গাড় ফাটা দো। আমাদের ক্লাসে মোবারকপুর পালপাড়ার বিবেক নামের একজন ছাত্র ছিল। আমার মামার বাড়ির কাছে বড়ীর মানুষ। আমি তাকে বেশ পছন্দ করতাম, ভালো ছাত্র। সে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল আই এম এ হিন্দু। আমরা সবাই পাথরের মতো হিম হয়ে গেছি। এখনই বুঝি গুলি করল। কিন্তু সেই সিন্ধি পাকিস্তান সৈন্য তাকে বললোঃ আপ হিন্দু নাহি পাকিস্তানি হায়। বড়া নাকরি করেগা, পাকিস্তানকো বড়া অফিসার হোগা।যাহোক সে যাত্রা রক্ষা। কয়েকদিন যেতে না যেতেই একদিন শুনলাম আমাদের ক্লাসের একজন মেয়ে যখন বাথরুমে গেছে তখন তার ওপর বল প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছে। আমাদের শিক্ষকরা সাহসী ছিলেন তার সাথে সাথে নালিশ করেছেন। এমন গুঞ্জন ইস্কুলে শুনে বাড়িতে গেলাম। পরদিন সকালে পরদিন সকালে স্কুলে ঢোকার আগেই লক্ষ্য করলাম সব শিক্ষকদের লাইনে দাঁড় করিয়ে লম্বা গোল রুলার দিয়ে একটা একটা করে বাড়ি দিচ্ছে। বুঝতে অসুবিধা হলো না পালিয়ে গেলাম। আমাদের অভিভাবকদের প্রতি নোটিশ দেয়া হয়েছিল স্কুলে হাজিরার জন্য। তা সত্ত্বেও ওই যে পালিয়েছি আর কখনোই স্কুলে যায়ইনি।
দেশ স্বাধীন হতে তারপর বেশিদিন লাগেনি। আমার ছোট মামা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমাদেরকে জানালেন যে আজকের আক্রমন করবেন এবং আমরা বহু মানুষ সবাই muktijuddher পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছি। স্কুলে থাকা পাকিস্তানে আক্রমন করল। মর্টারশেল নিক্ষেপ করল। স্কুলের ভিতরের ছাদে চল্টা উঠে গেল। সেই চিহ্ন টা ছিল। বেশ কিছু দিন হলো স্কুলটি ভেঙে ফেলেছে। সেই চিহ্নটি আর নেই। আমি এবং আমার জুনিয়র সহস্কুলি মাহবুব। এখন সিঙ্গাপুরে নাগরিক পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। অনেক দুঃখ পেয়েছি। বিষয়গুলো কেন সংরক্ষণ করা হয়নি। কিন্তু আমরা দূরে থাকি। স্কুলের মাঠ লিজ দেয়া হয়েছে অনেক দোকানপাট উঠেছে। গরুর হাট বসেছে। এরপরেও কয়েকটি বিল্ডিং করা হয়েছে তবে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ভাবে। গুচ্ছে করা হয়নি। সেই বিরাট মাঠ আজ আর নেই। আছে সারি সারি দোকান। খুব নামকরা স্কুল ছিল। এখন যিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হার্ডওয়ারের দোকানদার। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের পেছনে পেছনে থাকেন। স্থানীয়রা বলে স্কুলের জমি লিজ দিয়ে টাকা নেয়া থেকে শুরু করে নানা দুর্নীতির সাথে জড়িত। রাজনৈতিক লিয়াজো মেইন্টেইন করেন তাই তাঁকে কিছু বলার জো নেই। ভোট হলে তিনি জেতেন। তিনি জানান কিভাবে ভোট করতে হবে। কিভাবে টাকা দিলে ভোটগুলো নিশ্চিত পাওয়া যাবে। পুনরায় সভাপতি হয়ে যাবে।
সকালে মায়ের রাধা গরম ভাত খেয়ে হেঁটে স্কুলে পৌঁছতে পৌঁছতে ক্ষুধা লেগে যেত। ক্লান্ত ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাড়িতে পৌঁছাতাম। ক্লাসে এসে টেবিলের ওপর বেত দেখতাম। মাঝে মধ্যে আঙ্গুলের মাঝে পেন্সিল দিয়ে চাপ দেওয়া হত। পেটের চামড়া মোচড় দিয়ে মধুমোড়া নামের একটি শাস্তির সৃষ্টি করা হয়েছিল। কান ধরা তো খুবই সাধারণ বেঞ্চের ওপর দাঁড়ানো বা বারান্দায় দাঁড়ানো অপমানের হলেও খুব কষ্টকর ছিল না। high school tyrone দেভর করছে। তবে কোনো কোনো শিক্ষক মারখুটে হলেও খুবই ভালো পড়িতেন মুখস্থ হয়ে যেত যেমন chemistry teacher। তাই স্কুল থেকে chemistry প্রতি একটু দুর্বলতা সৃষ্টি হয়ে গেল। এভাবেই কয়েক মাস গেল তারপর পাকিস্তানি সৈন্যরা স্কুলে এসে ঘাঁটি গাড়ল। সাথে সহযোগীরা রাজাকাররা ছিল। পাকিস্তানি সৈন্যরা মাঝে মাঝে আমাদের উদ্দেশ্য করে বক্তৃতি দিতেন। তারা বলতেন তোমরা সবাই পাকিস্তানি। এমন একদিন আমাদের একজন শিক্ষার্থী হক বলে ওঠেলো হিন্দু কাহা হায়? পাকিস্তানি সৈন্য বললো হিন্দুকা গাড় ফাটা দো। আমাদের ক্লাসে মোবারকপুর পালপাড়ার বিবেক নামের একজন ছাত্র ছিল। আমার মামার বাড়ির কাছে বড়ীর মানুষ। আমি তাকে বেশ পছন্দ করতাম, ভালো ছাত্র। সে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল আই এম এ হিন্দু। আমরা সবাই পাথরের মতো হিম হয়ে গেছি। এখনই বুঝি গুলি করল। কিন্তু সেই সিন্ধি পাকিস্তান সৈন্য তাকে বললোঃ আপ হিন্দু নাহি পাকিস্তানি হায়। বড়া নাকরি করেগা, পাকিস্তানকো বড়া অফিসার হোগা।যাহোক সে যাত্রা রক্ষা। কয়েকদিন যেতে না যেতেই একদিন শুনলাম আমাদের ক্লাসের একজন মেয়ে যখন বাথরুমে গেছে তখন তার ওপর বল প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছে। আমাদের শিক্ষকরা সাহসী ছিলেন তার সাথে সাথে নালিশ করেছেন। এমন গুঞ্জন ইস্কুলে শুনে বাড়িতে গেলাম। পরদিন সকালে পরদিন সকালে স্কুলে ঢোকার আগেই লক্ষ্য করলাম সব শিক্ষকদের লাইনে দাঁড় করিয়ে লম্বা গোল রুলার দিয়ে একটা একটা করে বাড়ি দিচ্ছে। বুঝতে অসুবিধা হলো না পালিয়ে গেলাম। আমাদের অভিভাবকদের প্রতি নোটিশ দেয়া হয়েছিল স্কুলে হাজিরার জন্য। তা সত্ত্বেও ওই যে পালিয়েছি আর কখনোই স্কুলে যায়ইনি।
দেশ স্বাধীন হতে তারপর বেশিদিন লাগেনি। আমার ছোট মামা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমাদেরকে জানালেন যে আজকের আক্রমন করবেন এবং আমরা বহু মানুষ সবাই muktijuddher পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছি। স্কুলে থাকা পাকিস্তানে আক্রমন করল। মর্টারশেল নিক্ষেপ করল। স্কুলের ভিতরের ছাদে চল্টা উঠে গেল। সেই চিহ্ন টা ছিল। বেশ কিছু দিন হলো স্কুলটি ভেঙে ফেলেছে। সেই চিহ্নটি আর নেই। আমি এবং আমার জুনিয়র সহস্কুলি মাহবুব। এখন সিঙ্গাপুরে নাগরিক পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। অনেক দুঃখ পেয়েছি। বিষয়গুলো কেন সংরক্ষণ করা হয়নি। কিন্তু আমরা দূরে থাকি। স্কুলের মাঠ লিজ দেয়া হয়েছে অনেক দোকানপাট উঠেছে। গরুর হাট বসেছে। এরপরেও কয়েকটি বিল্ডিং করা হয়েছে তবে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ভাবে। গুচ্ছে করা হয়নি। সেই বিরাট মাঠ আজ আর নেই। আছে সারি সারি দোকান। খুব নামকরা স্কুল ছিল। এখন যিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হার্ডওয়ারের দোকানদার। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের পেছনে পেছনে থাকেন। স্থানীয়রা বলে স্কুলের জমি লিজ দিয়ে টাকা নেয়া থেকে শুরু করে নানা দুর্নীতির সাথে জড়িত। রাজনৈতিক লিয়াজো মেইন্টেইন করেন তাই তাঁকে কিছু বলার জো নেই। ভোট হলে তিনি জেতেন। তিনি জানান কিভাবে ভোট করতে হবে। কিভাবে টাকা দিলে ভোটগুলো নিশ্চিত পাওয়া যাবে। পুনরায় সভাপতি হয়ে যাবে।