যেকোনো কাজের জন্য পরিমিত চাপ অধিক ফলদায়ক। অধিক চাপে পরিশ্রান্ত এমনকি বিদ্রোহ, নিম্নমানের ফল।
বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে এই চাপের পরিমাণ একটু বেশি ছিল। নতুন একটি প্রতিষ্ঠানে অনেক ধরনের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। একটি প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্য যে ধরনের রিসোর্স দরকার তা ছিল না। টেবিল থেকে শুরু করে মেটিরিয়াল রিসোর্সের ওর কথা যদি বলতে হয় তবে তার প্রবল সংকট ছিল। তৎকালে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ছিল না। আর্থিক দিক থেকেও নতুন একটি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের বাজেট দেয়া হয় না এখানেও তাই ঘটেছিল।
এই ধরণের সংকটের মধ্যে কাজ করে এক ধরনের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা অর্জিত হয়েছিল। কিন্তু চাপ এবং আর্থিক অনটন বেশিদিন ভোগ করা যায় না।
আমার এক বন্ধু শফিক আলম মেহেদী সাভার ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার ছিলেন তিনি ওখান থেকে চলে আসার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। আমার অবস্থা তিনি খুব ভালোভাবেই জানতেন। আমিও তার অবস্থা জানতাম। সাভার ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে যাওয়ার তিনি আগে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ছিলেন। তখন সবে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে এসেছি। সেই সময় আমি লাঞ্চের সময় তার সাথে সিঙ্গাড়া ভাগ করে খেয়েছি। সে আমাকে বললো ক্যান্টনমেন্টে রেশন পাওয়া যায়। সুন্দর একটা বাড়ি, গরুর-মুরগি পোষা যায়, সবজি লাগানো যায়। একটি ফুল টাইম গাড়ি থাকে। এসব কারণে স্বচ্ছল জীবন যাপন করা যায়। এডজাস্ট করতে পারলে ভালো পরিবেশ পাওয়া যায়। সে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ঢোকার আগে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সে কাজ করেছে। অত্যন্ত মিশুক, সবাইকে প্রশংসা করে, খুব সহজে আপন করে নেয়।
অনুরোধের আগেই সে আমাকে বলল তুমি এখানে আসলে ভালো হবে।
আমার জন্য বিরাট একটি উপকার হলো। সাভারে ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে জয়েন করলাম। ঘাটাইল নতুন ক্যান্টনমেন্টর তাই কিছুদিন সেখানকার এক্সিকিউটিভ অফিসারের অতিরিক্ত দায়িত্বও আমার উপর ছিল।
ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার মূলতঃ ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থানকারী সিভিলিয়ানদের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকেন। ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ও বটে। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাইরে কিছু এলাকা যাকে চ্যাপ্টার এলাকা বলে। এই এলাকা ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসারের এখতিয়ারাধীন। তখন সবে ঢাকা ইপিজেড তৈরি তোড়জোড় চলছে। জমি অধিকগ্রহণ চলছে। ঐ এলাকা সাভার ক্যান্টনমেন্ট এর চ্যাপ্টার্ড এলাকার অন্তর্ভুক্ত তাই সেখানকার জমি অধিগ্রহণসহ ভবন নির্মাণের অনুমতি দিতে হয়।
শফিক নিজেই জিওসি এর মাধ্যমে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে আমার পদায়নের ব্যবস্থা করলেন। যোগদান করলাম।
মিলিটারি ফার্ম থেকে রিজেক্ট দুধের গরু কিনলাম কোন বাছুর নেই কিন্তু দুধ দিতে থাকলো তাও ৫ কেজির বেশি। ১০০ মুরগি পুষলাম, ডিম দিতে থাকলো। সেনাবাহিনীর গম ভাঙ্গানো মিল থেকে উচ্ছিষ্ট আটা ও গমের অংশ এনে মুরগিকে খাওয়াতাম। ক্যান্টনমেন্টে প্রচুর জার্মানি লতা, কোন কাজে লাগে না। গরুকে জার্মানি লতা খেতে অভ্যস্ত করলাম। দুধের পরিমাণ বেড়ে গেল। সাভার গ্রাম এলাকা বাসার ইলেকট্রিক লাইটে প্রতি রাতে কয়েক কেজি ফড়িং এসে জড়ো হয়। রাতে মুরগিগুলোকে ছেড়ে দিয়ে ফড়িং খাইয়ে একদিকে পোকার উপদ্রব কমানো অন্যদিকে প্রোটিনের যোগান দেয়ার ব্যবস্থা করলাম। একদিন এই পোকার লোভে গোখরো সাপ এসে জীবন হারালো। সবজির ক্ষেত করলাম। অভাব-অনটন চলে গেল। তবে কালচারাল ক্লাশের মধ্যে দিন কাটতে থাকলো।
Wonderful, what a website it is! This webpage gives useful facts to us, keep it up.| Keriann Clevie Matless