কোন কিছু না করা পর্যন্ত অসম্ভব মনে হয় – নেলসন ম্যান্ডেলা
একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। হুমকি-ধামকি, প্রতিশ্রুতি কোন কিছুই কাজে আসছে না, পরীক্ষা বাতিলের কথা বলে কমিটি গঠন করে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। ফেসবুক বন্ধ, সময় নিয়ে কড়াকড়ি, পুলিশি ধরপাকড় কোন ওষুধই কাজে আসছে না। তাহলে কি প্রশ্নপত্র ফাঁস চলতেই থাকবে ?
একটু পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটা যাক, কেন এই অবস্থার সৃষ্টি হল ? পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব বোর্ডের। বোর্ড প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধের ব্যাপারে কোন প্রস্তুতি নিয়েছে ? নতুন প্রযুক্তি, পরিবর্তিত মূল্যবোধ, শিক্ষার গুরুত্ব ও ব্যাপকতা চিন্তা করে ১০টি শিক্ষা বোর্ড কোন একটিতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা হয়েছে কি ? প্রশ্নপত্র ফাঁসের উৎস সন্ধানের জন্য বোর্ডে cyber security বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হয়েছে কি ? এসব প্রশ্নের একটাই উত্তর, না। তাহলে কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভব ?
প্রশ্নপত্র ফাঁস কয়েক রকমের:-
(১) কিছু মানুষ সাজেশন আকারে প্রশ্নপত্র দিয়ে থাকে। এ কাজে সে আনন্দ পায়। বড়সড় কিছু একটা করেছে মনে করে গর্ববোধ করে। কিছু প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে মিলে যায়। যেমনটা সাজেশনের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
(২) কিছু মানুষ টাকা পয়সা কামাই করার উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে ভূয়া প্রশ্ন দিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে নেয়।
(৩) সত্যি সত্যিই প্রশ্ন ফাঁস করে। টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা কর্তৃপক্ষকে হয়রানি করার মাঝে আনন্দ খুঁজে পায়।
প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা:
প্রশ্ন ব্যাংক মডিউল: প্রতিটি বোর্ডের একটি ইলেকট্রনিক প্রশ্ন ব্যাংক থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে, যেকোনো শিক্ষক কিংবা যেকোনো ব্যক্তি সেখানে প্রশ্ন পাঠাতে পারবে। প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের জন্য বিশেষজ্ঞ টিম থাকবে তার উপর প্রতিটি বিষয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ টিম থাকবে। এই বিশেষজ্ঞ টিম প্রেরিত প্রশ্নগুলোো যাচাই করে প্রশ্ন ব্যাংকেে ঢুকাবেন। ভুল-ভ্রান্তি হলে জবাবদিহিতা করার জন্য কোনটিিি প্রশ্ন যাচাই করেছেন তার তথ্য থাকবে। সেখানে দু’ধরনের প্রশ্ন থাকবে। কোন বিষয়ের উপর সেট করা প্রশ্নপত্র কিংবা পৃথক পৃথক প্রশ্ন বেছে বেছে প্রশ্ন্ন সেট করার ব্যবস্থা থাকবে। প্রশ্ন ব্যাংকে প্রশ্নপত্রর বা প্রশ্ন encrypted করা থাকবে। যেন কেউ বের করলেও পাঠ যোগ্য না হয়। প্রশ্ন প্রণয়নের প্রশ্নব্যাংক থেকে প্রশ্নপত্র বা প্রশ্ন নেয়া় হবে।
প্রশ্নব্যাংক থাকলে প্রশ্নপত্র ছাপানো এবং পরিবহনের সময় হাঁস হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
পরীক্ষা হল ব্যবস্থাপনা মডিউল
পরীক্ষা হল ব্যবস্থাপনা তিনটি বিকল্প মডেল থাকতে পারে, যার যেকোন একটি ব্যবহার করা যেতে পারে:-
প্রথমত: প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রের দুইটি ip printer রাখা যেতে পারে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ব্যাংক থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের ip প্রিন্টারে প্রশ্ন পাঠানো যায়। এবং এই আই পি প্রিন্টারে ছাপানো এবং পরীক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে প্রশ্ন ছাপানো ও বিতরণের ত্রুটি দূর করা গেলেও কেন্দ্র থেকে আধা ঘন্টার মধ্যে বাইরে প্রশ্ন পাঠিয়ে দিলে করার কিছু নেই। তবেতবে এই সময়ের মধ্যে প্রশ্ন আউট হলেও বাইরে থেকে প্রশ্নের উত্তর পাঠিয়ে না দিলে পরীক্ষা প্রভাবিত করতে পারবে না। তাই এই পদ্ধতির সাথে পরীক্ষা হলে কড়া কড়ি আবশ্যক।
দ্বিতীয়তঃ প্রতিটি কেন্দ্রে বিশেষ ধরনের আই পি প্রিন্টার ব্যবহার করা যেতে পারে। এই প্রিন্টার প্রশ্ন প্রিন্ট করার সাথে সাথে অটোমেটিক খামের ভিতর ঢুকাবে এবং থামের গায়ে নিদৃষ্ট পরীক্ষার্থীর নাম থাকবে। সেই পরীক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ এই খামটি খুলতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীদের বেঞ্চে সিট অনুযায়ী এই খামগুলো বিতরণ করা হবে। পরীক্ষার্থী খাম খুলে পরীক্ষা দিবেন। এর উপর একটি সিরিয়াল নাম্বার দেয়া যেতে পারে। পরীক্ষার উত্তর পত্রের সাথে প্রশ্নটিই গেঁথে দিতে পারেন। ভবিষ্যতে কোনো প্রশ্ন দেখা দিলে মেটাডেটা থেকে যাচাই করা যেতে পারে। এইএই পদ্ধতি একটি ব্যয়বহুল হতে পারে। তবে এই পদ্ধতিতে নিরাপত্তা সম্ভাবনা বেশি।
তৃতীয়তঃ প্রশ্ন ব্যাংক থেকে সরাসরি ইন্টারনেটের সহায়তায় প্রশ্ন মাল্টিমিডিয়ায় প্রদর্শন করা যেতে পারে। যাদের পর্যাপ্ত multimedia থাকবে শুধু তাদেরকেই কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া যায়। আজকাল প্রায় প্রতিটি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া আছে। তাই এই পদ্ধতির সহজেই বাস্তবায়ন করা যায়। এই পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সবচেয়ে ভালো।
উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশ বর্তমান পদ্ধতি অনুযায়ী পরীক্ষক কোন পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রের সকল প্রশ্ন মূল্যায়ন করে নম্বর দিয়ে থাকেন। একজন পরীক্ষার্থীর সকল প্রশ্ন মূল্যায়ন না করে কয়েকশো পরীক্ষার্থীর একটিমাত্র প্রশ্নোত্তর মূল্যায়ন করে নাম্বার দিলে অধিক ন্যায়বিচার করা যায়। তাই পরীক্ষা হলে স্ক্যানারের মাধ্যমে প্রশ্নোত্তরগলো আলাদা করে কেন্দ্র থেকে electronic ভাবে পৃথক পৃথক পরীক্ষকের কাছে পাঠিয়ে দিলে মূল্যায়ন আরো বেশি ন্যায়ানুগ হবে। সেক্ষেত্রে বোর্ড পরীক্ষকের পৃথক পৃথক কোড নাম্বার দিবে যাতে পরীক্ষক শনাক্ত করে পরীক্ষার্থীরা যোগাযোগ করতে না পারে। মূল্যায়নের পর বোর্ডের নাম্বার পাঠিয়ে দিলে সহজেই পরীক্ষার ফলাফল ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তৈরি করা সম্ভব। এর ফলে অল্প সময়ে রেজাল্ট দেওয়া সম্ভব। পরীক্ষারপরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর মূল্যায়নসহ পরীক্ষার্থীদের কাছে খাতা ফেরত দেওয়া উচিত। শ্রেণী শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীদের ডেকে কোথায় কি ভুল করেছেন তা শুধরিয়ে দিতে পারেন। বর্তমানবর্তমান পদ্ধতিতে ফিডব্যাক দেয়ার সুযোগ নেই। তাই পরীক্ষা নেওয়া লার্নিং এর কোন অংশ নয়। যে কারণে অনেককে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। পদ্ধতিপদ্ধতি অবলম্বন করে পরীক্ষাকে আরো বেশি শেখার শেখানোর সাথে অর্থবহ করা যায়।
ফলাফল প্রকাশ ও ভর্তি: বর্তমানে ফলাফল প্রকাশ করা হয় তারপর অপশন নিয়ে কলেজে ভর্তি করা হয়। ফলাফল প্রকাশ এবং ভর্তির মাঝে বেশ কিছু সময় ব্যয় হয়। এই সময় ব্যয় না করে পরীক্ষার পরপরই option চাওয়া যায় result মডিউল এবং ভর্তি মডিউল merge করে একই সাথে ভর্তি ফল ও পরীক্ষার ফল একত্রে প্রকাশ করা সম্ভব। এই পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রয়োগ করা সম্ভব। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কোন শিক্ষার্থীর ইচ্ছার মূল্যায়ন হয় না।