নতুন আমদানি :
১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ডাক পড়ল। লম্বা তালিকা ১৫০ জনের প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এই প্রথম বেসামরিক কর্মকর্তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার আয়োজন করা হয়েছে। মাদারীপুর থেকে ভাটিয়ারী দূরত্ব অনেক, ভ্রমন ক্লান্তিকর। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম প্রশিক্ষণ শুধু দু’একদিন আগে ভাটিয়ারী গিয়ে বিশ্রাম নেব। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাটিয়ারী পৌছালাম। এক মাসের প্রশিক্ষণ একসাথে অনেক জিনিসপত্রপূর্ণ ভারী ব্যাগ ছিল। ভাটিয়ারী পৌঁছাতে কোনো অসুবিধা হলো না, তবে পৌঁছে বিপাক শুরু হল। আমাকে প্রথমে বলা হল জাহাঙ্গীর কম্পানির দোতালায় আমার কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। bag সহ দোতলায় উঠে ঐ কক্ষের সন্ধান পাওয়া গেল না। নিচতলায় এসে জিজ্ঞাসা করে আবার একই কথা বলা হলো। একইভাবে দু’তিনবার উপর নীচ করলাম। ততক্ষণে বুঝে গেছি আমার উপর ক্যাডেটদের মত প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে গেছে। আরাম হারাম। যা হোক শেষ পর্যন্ত কক্ষ পাওয়া গেল। পাশের সব অল্পবয়স্ক ক্যাডেট, ডাইনিং হলে ক্যাডেট, রাস্তাঘাটে উড়ানো পতাকায় স্যালুট দিয়ে ‘সালামালেকুম স্যার’ বলার হিড়িক। মনে হল এ এক আলাদা জগৎ, দ্বিতীয় হেমায়েতপুর। ক্যাডেট আমার দিকে বেশ ঐৎসুক্য দেখাচ্ছে। নতুন আমদানির জন্য অপেক্ষা করছে, কোন কোর্স সিনিয়রের আন্ডারে নেবে, ডলা-মলা দেবে।
অভিষেক :
ইতোমধ্যে একে একে অনেকেই পৌঁছে গেছে। অভিষেকের পালা, তবে কিছু অনুষ্ঠানাদি আছে তার একটি মেডিকেল টেস্ট। যথারীতি সকাল ৯ টায় একদল মেডিকেল সেন্টারে হাজির হলাম। ডিসিপ্লিন শেখানোর জায়গা তাই লাইন করে দাঁড়াতে হলো। এরপর আবারও সেই ডিসিপ্লিন, প্যান্ট খুলে ফেলে দাঁড়াতে বলা হলো। দু একজন অতি উৎসাহী তাই আগেই খুলে ফেলল। যারা যারা একটু দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন খুলতে শুরু করলেন। তখনকার জাংগিয়া এখনকার চেয়ে একটু ভিন্ন ছিল, সুতি এবং সামনে চিকন এখনকার বাচ্চাদের প্যান্টির মতো। তাই এ লজ্জা নিবারণের জন্য কেউ কেউ সামনে দু’হাত বাড়িয়ে দিল। কিন্তু কেউ কেউ ফোস করতে শুরু করলো, প্রতিবাদ করল। ভিতর থেকে একজন লোক বেরিয়ে আসলেন এবং দৃড়ভাবে আদেশ দিলেন। পর্যন্ত সবাই এক হয়ে প্রতিবাদ করার শুরু করলে সম্ভবত উপরের দিকে পরামর্শ করে ছাড় দিলেন। তারা এও চিন্তা করতে থাকলেন মিলিটারি একাডেমির ডিসিপ্লিন civilian এনে নষ্ট করা হচ্ছে কি না। তাই তারা আমাদেরকে আলাদা আলাদা রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে কয়েকদিন কেটে গেল। আমরা ইতিমধ্যেই ক্যাডেটদের সাথে বেশ জমিয়ে ফেলেছি।

