সাবেক শিক্ষা সচিবের কথা:
শিক্ষা জীবনের জন্য প্রস্তুতি। যে কোন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলেও ইহকাল ও পরকালের জন্য প্রস্তুতি। আল্লাহর নবীজির কাছে জিব্রাইলের মারফত প্রথম নির্দেশনা ‘পড়’। আমাদের জীবন অনেক সংক্ষিপ্ত। বিভিন্ন স্থানের প্রকৃতি ও পরিবেশ ভিন্ন। এমন অনেক বিষয় আছে যা একক কোনো মানুষের, কিংবা কোন এলাকার কোন মানব গোষ্ঠীর সারা জীবনেও অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব না। হাজার হাজার বছরের মানুষের চিন্তা ও অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান যা কিছু লিখে রেখে গেছে। কোটি কোটি মানুষের কালপরম্পরার জ্ঞান যা কিছু লিখে রেখে গেছে তার কিয়দংশ আমাদের কাছে পৌঁছেছে। সেই জ্ঞান আহরণের জন্য ‘পড়া’ অপরিহার্য।
পড়তে শেখা শেষ না। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যদি আমরা কিছু লিখে রেখে না যাই তবে আমরা যা পেয়েছি তার সাথে কিছু সংযোজন হল না, কিছু বৃদ্ধি হলো না। আমাদের জ্ঞান পূর্ববর্তী জ্ঞানের সাথে যুক্ত হয়ে আধুনিক জ্ঞানের সৃষ্টি হলো না, স্থান-কাল-পাত্র উপযোগী হলো না। তাই ছাত্র-শিক্ষক নির্বিশেষে আমাদের লিখতে হবে। জ্ঞানার্জনের জন্য আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে শোনা। জ্ঞান অর্জনের জন্য শোনার কৌশল গুরুত্বপূর্ণ। যত ভালো শ্রোতা ততো ভালো শিক্ষার্থী, ততো ভালো শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের না শুনলে শিক্ষক তাদের চাহিদা বুঝতে পারবে না। চাহিদা বুঝতে না পারলে জ্ঞান সরবরাহ করতে পারবে না। জ্ঞান বিতরণের আরেকটি বিষয় হচ্ছে ‘বলা’। যেটুকু জ্ঞান আছে তা যদি সবটুকুই পরিবেশন করা যায় তবে উত্তম। জ্ঞান পরিবেশন করা বা বলার আর্ট অর্জন করতে হয়। ভালো বলতে শেখা, ভালো শিক্ষার্থী গুন, ভালো বলতে পারা শিক্ষক গুন। মানুষের সাথে মিথস্ক্রিয়ার জন্য ভালো বলতে শেখা প্রয়োজন। ভালো বলতে শিখলে মানুষের সহায়তা সহযোগিতা পাওয়া যায়, টিম গঠন করা যায়। শিক্ষার্থী বাস্তব জীবনে সফল হয়।
স্পর্শ করার মাধ্যমে শেখাও একটি অভিজ্ঞতা। আমরা স্পর্শ করে গরম ঠান্ডা অনুভব করি। ভালো খারাপ সৎ অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করি। তাই স্পর্শ করাও শেখার বিষয়।
এরপর আসছে দেখা, আমরা অনেক কিছু দেখে শিখি। কিভাবে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয় তাও শিখতে হয়। পর্যবেক্ষণও দৃষ্টিকোণ আছে। কোন দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে তাও পরিবেশ-পরিস্থিতি সময় নির্ধারণ করে। এই পরিবেশ পরিস্থিতির সময়কে নিজের বিবেক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। যথাসম্ভব নিরপেক্ষ, ন্যায়সঙ্গত এবং বস্তুনিষ্ঠ করার জন্য। সবকিছুকে প্রয়োগ করে মানুষ নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। সৃষ্টিশীল, যৌক্তিক হতে হবে।
এতক্ষণ যা বললাম তার সাফল্য নির্ভর করবে চিন্তার মাধ্যমে, যদি পাঁচ মিনিট এর কোন একটা কিছুই করা হয় তবে ৫০ মিনিট চিন্তা করতে হবে।
আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা প্রতিষ্ঠানে কি শেখাই? যা কিছু শেখাই তা কি জীবনের জন্য প্রস্তুতি? এই শিক্ষা নিয়ে দুনিয়ার বাস্তব জগতে গিয়ে সে কি টিকে থাকতে পারবে? উত্তরোত্তর উন্নতি করতে পারবে? সফল হতে পারবে?
আমি আশা করি এস ডি ডিগ্রি কলেজে সেই শিক্ষাই দেওয়া হয়। কিংবা সেই সব শিক্ষাই দেওয়া হবে। আসুন রজত জয়ন্তীর এই শুভক্ষণে আমরা সবাই এই শপথ গ্রহণ করি।